প্রকাশিত: Thu, Jan 12, 2023 3:36 PM
আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 4:14 AM

পেয়েছেন জয়িতা ও বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার

ঝিকরগাছার শিক্ষার্থী নাসরিন নারীর স্বনির্ভরতার প্রতীক

সালেহ্ বিপ্লব: যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের নাসরিন নিজের বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন। নিজের পড়ালেখার খরচ মিটিয়ে পরিবারেও অর্থের জোগান দিচ্ছেন। নাসরিন সুলতানার হাত ধরে এলাকার অনেক নারীই এখন উদ্যোক্তা। বাসস

মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাসরিন এখন এলাকার নারী কর্মসংস্থানের প্রতীক। ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির পাশাপাশি তিনি কাজ করছেন নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও নারী পাচার রোধ এবং নারীদের নানা সমস্যা নিয়ে। 

নাসরিন বারবাকপুর গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে। তিনি উপজেলা নারী সামাজিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঝিকরগাছার জাগরণী সংসদের সদস্য। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ঝিকরগাছা মহিলা কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ছেন। পাশাপাশি ডিপ্লোমা করেছেন কৃষির ওপর। তার জৈব সার কারখানায় প্রতি মাসে অন্তত ৩০ মণ ভার্মি কম্পোস্ট সার (কেঁচো সার) তৈরি হয়। 

২০১৬ সালের প্রথম দিকে তিনি দুইটি নান্দায় (সার তৈরির পাত্র)  দেড়শ টাকা দিয়ে একশ গ্রাম কেঁচো কিনে শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি। বর্তমানে এ কারখানা থেকে প্রতি মাসে আয় হয় ১০-১২ হাজার টাকা। 

নাসরিন সুলতানার জৈব সারের এ কারখানা দেখে শুধু বারবাকপুর নয় আশেপাশের গ্রামগুলোতেও গৃহিণী ও যুবক-যুবতীরা কেঁচো কম্পোস্ট সার কারখানা গড়ে তুলেছেন। বারবাকপুর গ্রামের  মাজেদা বেগম বলেন, নাসরিনের কাছ থেকে কেঁচো কম্পোস্টের প্রশিক্ষণ নিয়ে জৈব সার কারখানা তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছি। এখন নিজেদের জমিতে এ সার ব্যবহার করে যা উদ্বৃত্ত থাকে তা বিক্রি করে সংসারের অন্যান্য খরচ মিটিয়ে থাকি। একই কথা  বলেছেন, বারবাকপুরের গৃহিণী বিথি বেগম, সাকিনা খাতুন ও পদ্মপুকুর গ্রামের সেলিনা বেগম।

ঝিকরগাছার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আইয়ুব হোসেন বলেন, নাসরিন এলাকায় নারী কর্মসংস্থানের প্রতীক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। কৃষিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে উদ্যেক্তা নাসরিন সুলতানা ২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারও পেয়েছেন। 

নাসরিন সুলতানা বলেন, আমি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে হাঁস-মুরগির ভ্যাকসিনের ওপর প্রশিক্ষণ দেই। পিছিয়ে পড়া নারীদের স্বামী নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে জেন্ডার সমতার প্রশিক্ষণ নেই।  ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি ও বসতবাড়িতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে পাড়ায় পাড়ায় প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এসব প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার যুবক-যুবতী ও নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। 

ঝিকরগাছা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অনিতা মল্লিক বলেন, নাসরিন সুলতানা স্বাবলম্বী ক্যাটাগরিতে ২০২১ সালে উপজেলা পর্যায়  জয়িতা পুরস্কার পান। তিনি নারী ও যুব সমাজের উদাহরণ। 

ঝিকরগাছা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আরব আলী  বলেন, নাসরিন সুলতানাকে দেখে এলাকার নারী ও যুবককেরা উদ্যোক্তা হওয়ার প্রেরণা পাচ্ছেন। নাসরিনকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে বলে তিনি জানান। সম্পাদনা: খালিদ আহমেদ